ডানা ভাঙ্গা পাখির কথা 2
স্নিগ্ধার কাছে আজকে বিতানের কথার সত্যিই কোন উত্তর নেই l নিজেকে বড় অসহায়, বড়ো অপরাধী মনে হচ্ছে l বিতানের শেষ কথা গুলো তে বড্ড যন্ত্রণা ছিল l সত্যি তো একদিন সবকিছু নিজের হাতে একতরফাভাবে শেষ করে দিয়েছিল l বাবা-মার ফিরে যেতে বলেছিল তাই বাড়ির সাথে সব সম্পর্ক চুকিয়ে উঠে এসেছিল পাক সার্কাস এর ফ্লাটএ l ভালোই হয়েছে বিতান অন্য একটা জায়গায় ডেকেছে l কিন্তু বুঝতে পারছি না কেন মনটা এত দুর্বল লাগছে l বিতান, ও আমাকে স্বীকার করে নেবে তো ? মেনে নেবে তো আবার ? প্লিজ ভগবান, তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, আমাকে, আমাকে আবার ফিরে আসতে দাও ওর জীবনে। আমি, সব কিছু ঠিক করে দেবো। নতুন করে সাজিয়ে তুলবো আমাদের সম্পর্ক, আর সেখানে যাতে কোনোদিন কোনো ফাটল না সৃষ্টি হয় , তারজন্য আমি সবকিছু করতে রাজি আছি। প্লিজ, প্লিজ।
একটু পরে বারান্দার দরজা ঠেলে সুপর্ণা এসে দাঁড়ায় পাশে , স্নিগ্ধার উদ্দেশ্যে বলে , "দিদি , বলছি সোনুর খাওয়া হয়ে গেছে। তোমরা তো আজ বাইরে যাবে, তাই না ? "
স্নিগ্ধা নিজেকে সামলে , চোখের জল মুছে নেয় হাতের পাতায়। কোনোরকমে হেসে বলে ওঠে ,"হ্যাঁ রে। আজ তো যেতেই হবে। আজ না গেলে আর হয়তো...." ভেতরে ঢুকে আসে স্নিগ্ধা।
সুপর্ণা ভেতরে ঢুকতে যাওয়া স্নিগ্ধাকে আটকিয়ে হঠাৎ বলে ওঠে,"দিদি, তোমাদের মধ্যে যা হয়েছে সব মিটিয়ে নাও না ! তোমরা তো এখনও কত ভালোবাসো দুজনকে, তাহলে ?" স্নিগ্ধা হেসে সুপর্ণার গালে টোকা দিয়ে বলে ওঠে ,"বুড়িমা আমার। যা তো ! তোকে আর পাকামি করতে হবে না। আচ্ছা শোন, আজ ফিরতে দেরী হবে আমাদের। হয়তো রাত ও হতে পারে। আমার জন্য অপেক্ষা করিস না , কেমন ? "
শৌনককে ডেকে দরজার দিকে এগিয়ে যায় স্নিগ্ধা। সুপর্ণা পেছন থেকে এসে স্নিগ্ধার হাতে গাড়ির চাবি আর জলের বোতল তুলে দেয়।
শৌনক আজ প্রচন্ড খুশি , কতদিন পরে মায়ের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে, আর মা বলেছে আজ বাবা আসবে। ওরা সবাই একসাথে চাইনিজ খাবে।
বাবা আসবে ? সত্যি ? কতদিন, কত মাস কেটে গেছে, বাবা কে দেখিনি। বাবা কি গিফ্ট আনবে ? মা তো বাবাকে আমাকে কিছু দিতেই দেয় না। সেই সকাল থেকে দেখছি, মা কিরকম একটা অন্যরকম হয়ে গেছে, খুব ভালো হয়ে গেছে মা। আগে কিরকম দূরে দূরে থাকতো সবসময়, মায়ের কাছে আসতেও ভয় হতো। সুপর্ণা দির কাছেই সব আবদার, বায়না। আজ মা সারাটা গাড়ি আমাকে পাশে বসিয়ে, আমাকে গল্প বলতে বলতে ড্রাইভ করেছে। আমরা সকালে কত ঘুরলাম, আমাকে নিয়ে পার্কে গেলো, আমরা একসাথে ড্রাগন রাইডে উঠলাম, কখনো উঠলাম, আবার পরেই হুহু করে নিচে নেমে এলাম ! কি ভয় লাগছিলো, আর মাকে শক্ত করে ধরেছিলাম আমি। মা ও আমাকে ধরে রেখেছিলো হাত দিয়ে, দুজনে খুব চিৎকার করলাম যখন ড্রাগনটা জোরে জোরে নিচের দিকে নেমে এলো। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গলা চিরে গেলো ! আজ মা চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে , মাথার চুল থেকে ক্লিপ সরিয়ে দিয়েছিলো। হাওয়াতে ভাসছিলো মায়ের মাথার চুল গুলো, ঠিক যেন প্রজাপতি ডানা মেলেছে কতদিন পরে। আজ মা নিজেও জিন্স আর টি-শার্ট পরেছে। মনে হচ্ছে মা যেন আমার বন্ধু , আমার সাথে খেলতে এসেছে। কতদিন, কতদিন এইভাবে মা কে পাই নি। ওহ গড, মাকে তুমি এইরকম ই রেখে দাও , আজ আমার প্রচন্ড আনন্দের দিন একটা। প্রত্যেকটা দিন যেন এইরকম হয়ে ওঠে।
স্নিগ্ধা গাড়ি চালাতে চালাতে ছেলের দিকে তাকায় , শৌনক, খোলা জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের দিকে। ওর মাথার চুলে হাত দিয়ে, চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে সামনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ,"কি রে ? কি ভাবছিস সোনু ? "
"কিছু না , এমনি, বাইরে দেখছিলাম। কত গাড়ি আর বাস ! " স্নিগ্ধার দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করে, "মা, আজ বাবা আসবে তো ? "
"আসবে, আসবে। আমি সকালেই ফোন করে দিয়েছি না ! " বলে ওঠে স্নিগ্ধা। মনে মনে ভাবে, আসতেই হবে তোমাকে বিতান, আজ প্লিজ, প্লিজ এসো , আমাকে হারিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাও; ডুবে যাচ্ছি আমি কোনো অতল গভীরে, আমাকে টেনে তুলে আনো ! তোমার অপেক্ষায় আছি আমি। প্লিজ, প্লিজ।
সময় ঠিক এগারোটা । বিতান এসে হাজির হয় অফিসে। সবাইকে গুড মর্নিং বলে ভেতরে ঢোকে ও। নিজের কেবিনে গিয়ে জল চেয়ে পাঠায়। আরো আগেই চলে আসতো অফিসে, কিন্তু স্নিগ্ধার ফোনটা আসার পরে সব কিরকম একটা ঘেঁটে গেলো। সারা রাস্তা শুধু স্নিগ্ধার ফোন, ওদের দুজনের কথা বার্তাই ওর মনের ভেতরে ঘুরছে। জল খাওয়ার পরে, মনটাকে কাজের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসে বিতান।
প্রায় জনা কুড়ি কি পঁচিশজন ছেলে মেয়ে কাজ করে চলেছে বাইরের ফ্লোরে , সবাই কম্পিউটারের সামনে বসে কিছু না কিছু করছে। দুটো কনফারেন্স রুম, সেখানেও কয়েকজন কিছু প্রেসেন্টেশন দেখাচ্ছে কাউকে, সেটা নিয়ে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে চলেছে এক নাগাড়ে। এক দিকের দেওয়ালে একটা বড়ো টিভি স্ক্রিন লাগানো, সেখানে কোনো কিছু ট্রেন্ড দেখানো হচ্ছে লাইন চার্টের মাধ্যমে , একজন কানে লাগানো হেডসেটের মাইক্রোফোনে কিছু বলছে, আর চার্ট চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে নিজের থেকে। অন্যদিকে দেওয়ালের মাঝে লাগানো পাঁচটা বড়ো ঘড়ি, সেখানে কোনোটার পাশে লেখা 'সি এস টি'; কোনোটার পাশে লেখা 'মেক্সিকো', কোনোটার পাশে লেখা 'লন্ডন', আরেকটার পাশে লেখা 'হংকং' , আর একদম শেষেরটিতে পাশে লেখা 'ইন্ডিয়া'।
কয়েকবছর আগে কোম্পানিটা শুরু করে বিতান, তখন শুধুমাত্র স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলো ও। আজ ওর কোম্পানি ছড়িয়ে পড়েছে বিদেশের মাটিতেও। বিতান নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলো সেলস এ। ধীরে ধীরে ও বুঝতে পারে, সেলস তো হচ্ছে, কিন্তু তার রিপোর্টিং ব্যবস্থা ভীষণ খারাপ, অনেক সময় দেরি হয়ে যায়, এক্স সপ্তাহ বা আরো বেশি , আর এতে ক্লায়েন্টরা অনেকসময় ওদের প্রোডাক্ট আর সার্ভিসের পারফরম্যান্স বুঝতে পারে না। সেটাকেই মাথায় রেখে, ও শুরু করেছিলো নিজের এই কোম্পানি। এখন প্রায় প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় ওদের কোম্পানির ক্লায়েন্টদের যাবতীয় সেলস ট্র্যাক করতে থাকে - ওদের কোম্পানির বানানো অটোমেটেড সিস্টেম। সেটা ক্লায়েন্টরাও নিজেদের অফিস থেকে দেখতে পায়। কোনো প্রশ্ন থাকলে , সেটা নিয়ে যোগাযোগ করে বিতান বা ওর টিমের সাথে।
বিতানের কলকাতার অফিসে এখন কাজ করে তিরিশ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি এক্সপেরিয়েন্স আছে মাত্র চারজনের। আর বাকি সবাইয়ের দেড় কি দুই বছর , আর সেটাও এখানেই। বিতান আসলে বিশ্বাস করে ইয়ং ব্লাড কে। ও জানে আর মানে , ইয়ং ব্লাড যদি ঠিক মতো তার উদ্দেশ্য খুঁজে পায়, কেউ তাকে আটকাতে পারবে না। অনেক সময় অনেক নতুন ক্লায়েন্ট এসে কথায় কথায় বিতানকে জিজ্ঞেস করে, এদের এক্সপেরিয়েন্স নেই, এরা পারবে তো কাজ করতে ? বিতান ওদের সবাইয়ের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলে, "এক্সপেরিয়েন্স তো কাজ করতে করতেই আসবে। সবাই যদি এক্সপেরিয়েন্স লোকজন খোঁজে, তাহলে যারা নতুন তারা এক্সপেরিয়েন্সটা পাবে কোথা থেকে ? "
কিন্তু বাইরে বেরিয়ে এসব ভাবতে ভাবতেও বার বার মন চলে যাচ্ছে স্নিগ্ধা আর শৌনকের দিকে। কিছুতেই স্থির থাকতে পারছে না বিতান। আবার ভেতরে ঢুকে আসে ও। আজ সকালে নিজেকে বেশ মুক্ত মনে হচ্ছিলো । কালকে মেহেকে সমস্ত কথা শেয়ার করে মনে হোল হয়তো আমি নিজেকে অকারণে শাস্তি দিয়ে চলেছি । আজ সিন্ধার ফোনটাতে সব জানেও ঘেটে গেছে। ..কি চায় ও ? লাস্ট তো পারভীন এর সাথে রিলেসন ছিলো।. তাহলে কি পারভীন নতুন কোন রিলেসন এ জড়িয়েছে আর সিগ্ধাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তাই সিগ্ধ ফিরতে চাইছে ?
সত্যি শ্রীযাস চররিতরম দেবা না যান্যন্তি কুত মনুষ্যা
আমি ওর কাছে অপসনই থেকে গেলাম যাকে ন্যাপকিনের মতো ইউজ করে ছুড়ে ফেলা হয়
বিতান একবার ভাবে মেহেক ফোন করলে কেমন হয় ভাবতে ভাবতেই আনমনে ফোনটা টেনে নিয়ে হঠাৎ করে মেহেক কে ফোন করে। একটু পরে মেহেক ঘুম ঘুম চোখে জড়ানো গলায় বলে ওঠে ,"হ্যালো ! "
বিতান ভাবে ফোনটা কেটে দেবে , তবুও বলে ওঠে ,"মেহেক , আমি বিতান বলছি। "
"ও বিতান ! আই এম সো সরি। তোমার, ওই ইন্টারভিউর কথা আমি ভাই কে বলেছিলাম। " বিতানের মনে পড়ে যায় ইন্টারভিউর কথা। স্নিগ্ধার ফোন আসার পরে সব কিরকম যেন ঘেঁটে গেছে , সব কিছু মাথা থেকে বেরিয়েই গেছে। সময় দেখে বিতান, সময় প্রায় বারোটা। আর তো আধঘন্টা পরে মায়াঙ্কের আসার কথা। কিন্তু মনের যা অবস্থা, কোনো কিছুই আজ করতে ইচ্ছে করছে না আজ। বিতান বলে ওঠে ,"উমমম, মেহেক, আজকে থাক ! তোমার ভাইকে বোলো, সোমবার আসতে। "
"সেটাই তো বলছিলাম আমি, আসলে আমি যখন মায়াঙ্ককে সকালে বললাম ইন্টারভিউর কথা, ও আমাকে জানালো, ও অন্য একটা জায়গাতে পেয়ে গেছে, আর সেখানেই জয়েন করবে সোমবার থেকে। ও নিজেও আজ সকালেই খবরটা পেয়েছে। তোমাকে জানাবো ভাবলাম, কিন্তু এতো ক্লান্ত লাগছিলো, এসে ঘুমিয়ে পড়েছি। সরি , ভেরি সরি বিতান। "
"না না ! সরি কিসের। এতো ভালো খবর, যে মায়াঙ্ক নিজের পছন্দের চাকরি পেয়ে গেছে। আসলে কি জানেন মেহেক, নিজের মনের মতো কাজ পেলে, অন্য সবকিছু ভুলে যাওয়া যায় - খাওয়া দাওয়া , ঘুম। খুব কম-জনই এরকম ভাগ্য করে আসে। আমি তবে আপনাকে সেজন্য ফোন করিনি। মেহেক, আপনার সাথে কি একটু কথা বলা যাবে ? আপনি ঘুমোচ্ছিলেন, আর আমি উঠিয়ে দিলাম, তবুও। আসলে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো আপনার চলে যাওয়ার পরে, আমি , আমি ভীষণ কনফিউজ হয়ে গেছি। কি যে করবো, বুঝতে পারছি না। হয়তো আপনি ভাববেন...."
"আমি কিছু ভাববো কেন বিতান ? আমি না তোমার বন্ধু ? বন্ধুদের সাথে তো সব কথা শেয়ার করাই যায় , তাই না ? এই গতকাল রাতে, যদি তুমি সবকিছু আমাকে না বলতে পারতে, তাহলে কি আবার কবিতা লিখতে পারতে? আমাকে বলে, তুমি তো মনের দিক থেকে শান্তি পেয়েছো ! তাই তো আবার আমাকে ফোন করে কথা বলতে চাইছো । তাই না ? " বলে ওঠে মেহেক। যদিও মেহেকের প্রফেশনে, একবার সার্ভিস দেওয়া হয়ে গেলে ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলা, ভাব বাড়ানো প্রোটোকলের বাইরে, তবুও মেহেক পারছে না নিজেকে সরিয়ে রাখতে বিতানের কাছ থেকে। কিভাবে, কখন, কেন যে বিতানকে মনের গভীরে এক টুকরো মূল্যবান জায়গা দিয়ে দিয়েছে, ও নিজেও বুঝতে পারছে না। এভাবে ক্লায়েন্টদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে, ওদের প্রফেশনে সেটা খারাপ এফেক্ট করে। অনেক সময় অনেক ক্লায়েন্ট এরকম করে অন্য মেয়েদের সাথে, তাদের ভালোবাসার জালে জড়িয়ে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে, দিনের পর দিন তাদের সাথে এদিক ওদিক ঘুরতে যায় , রাত কাটায় ; আর একদম শেষে নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বোকা মেয়েগুলো তখন না পায় পরিশ্রমের মূল্য, না পায় সেই ভালোবাসা। কিন্তু, বিতান, বিতান তো সম্পূর্ণ অন্যরকম। ও তো এখনও স্নিগ্ধকেই ভালোবাসে ; স্নিগ্ধা ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে নেই ওর জীবনে , ও ভাবতেও পারে না কাউকে। আর মেহেক কিনা এইরকম ই একজনের প্রেমে পড়ে গেলো ? নিজের ওপরে নিজেই ভীষণ আশ্চর্য হয়ে ওঠে মেহেক।
বিতান একটু পরে বলে ওঠে , "আপনি, আপনি চলে যাওয়ার পরে , ঘরে ফিরে এসে দেখি স্নিগ্ধা আমাকে ফোন করেছে। একবার নয়, অনেকবার। ওর সাথে কথা হলো আমার। ও, ও ফিরে আসতে চাইছে। আবার সব কিছু নতুন ভাবে শুরু করতে চাইছে। "
মেহেক সোজা হয়ে উঠে বসলো বিছানার ওপরে। চোখের পাতায় লেগে থাকা ঘুমগুলো যেন হঠাৎ করেই কোথাও চলে গেলো উড়ে। অযাচিত একটা যন্ত্রনা হচ্ছে বুকের ভেতরে , মনে হচ্ছে কিছু একটা ইচ্ছে, জোর করে কেউ পাথরের নিচে চাপা দিয়ে মেরে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে, সতর্ক স্বরে মেহেক বলে ওঠে ,"তাহলে? ভালোই তো। খুব ভালো খবর ! আর তুমি কি করছো এখনও ? তোমার তো তখনই ছুটে যাওয়া উচিত ছিলো স্নিগ্ধার কাছে, তোমার ছেলের কাছে ! কিসের জন্য অপেক্ষা করছো ? "
"জানি না মেহেক , জানি না কিসের জন্য অপেক্ষা করছি। হয়তো অপেক্ষা করছি, পুরো ব্যাপারটা ভালো করে বোঝার জন্য। এটাতো আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি, যদিও মনে মনে সবসময় চাই, যে ওরা ফিরে আসুক, আবার আমরা আগের মতো এক হয়ে যাই। কিন্তু, কিন্তু তবুও যেন একটা কোনো বাধা , আটকে দিচ্ছে আমাকে। আমি তো বলেছি দুপুরে আড়াইটের সময় দেখা করবো ওর সাথে,..........এই চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। আসলে শৌনকের চাইনিজ ভীষণ পছন্দের। তখন আমি আর স্নিগ্ধা ভালো করে কথা বলবো একসাথে। জানো ? প্রায় তিনবছর পরে, আবার আমরা মুখোমুখি। এতদিন ও সবসময় আমার থেকে দূরে থেকেছে। আমাকে সহ্য করতে পারতো না , নিজেই দূরে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিলো আমাকে। আজ হঠাৎ, কি এমন হলো, যে আবার ফিরে আসতে চাইছে ? লাস্ট তো পারভীন এর সাথে রিলেসন ছিলো।. তাহলে কি পারভীন নতুন কোন রিলেসন এ জড়িয়েছে আর সিগ্ধাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তাই সিগ্ধা ফিরতে চাইছে ? সেটাই যদি হয় তবেতো আমি ওর কাছে অপসনই থেকে গেলাম, যাকে ন্যাপকিনের মতো ইউজ করে ছুড়ে ফেলা হয় | বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে সেই আগের ঘটনাগুলো, সেই অপমানের দিন রাতগুলো কেন ভেসে উঠছে চোখের সামনে ? একটা কথা কি জানেন মেহেক ? আমাদের মানুষের সম্পর্ক গুলো আসলে সুসজ্জিত কাঁচের তৈরী একটা মূর্তির মতো। যত্ন করে, সাজিয়ে, মুছে, ধুয়ে রাখতে হয় এমনভাবে, যাতে উঁচু কোনো জায়গা থেকে পড়ে ভেঙে না যায় ! একবার যদি পড়ে ভেঙে যায়, তাকে আপনি দুনিয়ার সবথেকে ভালো গাম - আঠা দিয়ে যতই জোড়া লাগান না কেন, চিড় থেকেই যায় ওর মধ্যে। সেটা কিছুতেই সরানো যায় না। আমাদের সম্পর্কের খাতাতেও সবকিছু লেখা হয়েছিলো সোনার জলে , হঠাৎ করে সেখানে কিছু আঁচড় - কালো কালির মোটা দাগের আঁচড় টেনে দিয়েছিলাম আমরা দুজনেই। সেই আঁচড় আর তুলে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না আমাদের সম্পর্কের খাতার ওপর থেকে। আসলে , আসলে আমি খুব দুর্বল মেহেক। একবার আমি স্নিগ্ধার চলে যাওয়া কোনোরকমে সামলে নিয়েছি। কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে আবার এরকম কিছু হবে না ? আবার ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না ? সেই একই কারণে, বা অন্যকিছু অজুহাতে ? আমি কিছু বুঝতে পারছি না !" বলে ওঠে বিতান।
" তোমাকেই সিধান্ত নিতে হবে তুমি স্নিগ্ধাকে আবার বিশ্বাস করবে কি করবে না | আমি জানি তুমি ওদের কতোটা ভালোবাসো তাই বসে খোলাখুলি কথা বোল | দেখো সিগ্ধার এই পরিবর্তন আন্তরিক কিনা | নাকি ও তোমার ভালো বাসাকে কামনা করছে শুধু ব্রেক আপ এর যন্ত্রণা মেটাতে ? আসলে রুপোলী পর্দার কাজল চোখে লাগালে তা মেটা বড়ো মুশকিল বিতান | সময় নিয়ে সিধান্ত নিও | এখন ছাড়ছি আমি " বলে ওঠে মেহেক।
Comments
Post a Comment